পুলিশ মামলা না নিলে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের কাছে আসেন; তাদের কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য। আবার অসহায় কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখা টাকার অভাবে বন্ধ হতে বসলে সে খবরও সাংবাদিকরাই গণমাধ্যমে তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেন। এতে সহযোগিতাও পান অনেকে। টাকার অভাবে কারো চিকিৎসা হচ্ছে না সেই খবরও সাংবাদিকরাই তুলে ধরেন। সমাজের নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি-উন্নয়নের চিত্রও তুলে আনেন সাংবাদিকরাই। নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে একজন সাংবাদিককে মাঠে কাজ করতে হয়। জনস্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখেই একটি সংবাদ করে থাকেন তাঁঁরা। রাত-দিন ২৪ ঘন্টাই নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয় সাংবাদিকদের। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রিয়জনদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানসহ পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠানেই অংশ নিতে পারেন না তাঁরা। নিজ দায়িত্ব সঠিক ও সততার সাথে পালনের জন্য অনেক সাংবাদিকের উপর হামলাও হয়, আবার মামলাও হয়। অনেক সময় মিথ্যা মামলায় জেলও খাটতে হয় সাংবাদিকদের। প্রাণও গেছে অনেকের।
যে ঘটনা নিয়ে আজকের এই লেখা।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি, আরটিভি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন বাবুল সহ স্থানীয় দৈনিক লোকায়ন পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি।
যে সংবাদের কারণে মামলা: পীরগঞ্জে স্বাধীনতা বিরোধী পিতা-কন্যাকে মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা বানানোর প্রতিবাদে ৩১ জুলাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ১ আগষ্ট(২০২১) দৈনিক লোকায়ন সহ বিভিন্ন স্থানীয় আঞ্চলিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ফলাও ভাবে সংবাদ সম্মেলনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের সাড়ে তিন মাস পর গত ১৭ নভেম্বর ঠাকুরগাঁঁও আমলী আদালতে দুই সাংবাদিক সহ এক মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডারের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলী একটি মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। আদালত পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
কোনো সংবাদের কারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ বা মানহানি হলে তাঁরা আইনের আশ্রয় নিয়ে সাংবাদিকদের শাস্তি আদালতের কাছে চাইতেই পারেন। স্বাধীন রাষ্ট্রে জবাবদিহিতার উর্ধ্বে কেউ নয়। সে সাংবাদিক হউক বা অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি হউক। বিচার চাওয়ার অধিকার যে কারো আছে।
কিন্তু বিচার চাওয়ার উদ্দেশ্য সৎ হতে হবে। আপনি চাইলেই কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মানহানির অভিযোগ এনে মামলা করতে পারেন না। একটি সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ প্রকাশের জেরে কেন একজন সাংবাদিকের নামে মামলা হবে? সংবাদ সম্মেলনের খবর বিশেষ করে ভুক্তভোগীর বক্তব্য বা দাবি তুলে ধরে উচ্চ মহলে বা সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়ে থাকে। একটি সংবাদ সম্মেলনে তথ্যাদি সহ যে লিখিত দাবি করা হয়, মূলত তাই একটি সংবাদে তুলে ধরেন সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলনে অনেক সময় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, সেক্ষেত্রে তাদেরও বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে। তাহলে সাংবাদিকের অপরাধ কী? সংবাদ সম্মেলনের খবর প্রকাশের জন্য মামলায় বা কেন? বা ঘটনার সাড়ে তিন মাস পর একজন ব্যক্তির মানহানি হলো কেন? বিষয়টা নিশ্চয় অন্য কিছু! বিচার চাওয়ার উদ্দেশ্য সৎ না। যেহেতু মামলা হয়েছে সাংবাদিকও নিশ্চয়ই আইনীভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করবেন। তাঁকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিচারও তিনি চাইবেন আদালতে।
কথা হচ্ছে, মামলা করার উদ্দেশ্যটি যখন পরিষ্কার। সাংবাদিককে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই মানহানি মামলা। তাহলে সাধারণ জনগণের কি উচিৎ হবে না, এই হয়রানি মামলার প্রতিবাদ করে সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ানো? যে সাংবাদিকরা আপনাদের বিপদে,সমস্যায় পাশে দাঁড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে যখন মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় একটি গোষ্ঠী; তখন সেটির প্রতিবাদ করে পাশে দাঁড়ানো। সত্যতা যাচাই করে পাশে দাঁড়ান, আওয়াজ তুলুন। মিথ্যা মানহানি মামলা প্রত্যাহার চাই। মিথ্যা মানহানি মামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সাংবাদিকদের বিপদে আপনারা জনগণ চুপ বা নিরব দর্শক হলেও একজন সাংবাদিকের সেই সুযোগ নেই। দিন-রাত সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালন করতেই হবে।