ঠাকুরগাঁও-৩: কার হাতে যাবে বিএনপির মনোনয়ন?

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫

ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলাজুড়ে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি বিগত সময়ের থেকে বর্তমানে যথেষ্ট শক্তিশালী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দেখে বোঝা যায়, প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে দলের জন্য অবদান রেখেছেন এবং দলের সংকটকালীন সময়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. জাহিদুর রহমান এই আসনের রাজনীতিতে সুপরিচিত ও অভিজ্ঞ এক নাম। তিনি ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, যা তার জনপ্রিয়তা ও জনআস্থার প্রমাণ বহন করে। তার রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। তৃণমূলের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গ্রামের সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত সবাই তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন। জাহিদুর রহমান সবসময়ই সংগঠনের ভিত মজবুত করতে কাজ করেছেন। আন্দোলন, মিটিং-মিছিল বা সাংগঠনিক কার্যক্রম সবক্ষেত্রেই তিনি মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের সংকটকালে তিনি কখনোই পিছু হটেননি, বরং নেতাকর্মীদের উৎসাহ দিয়ে পাশে থেকেছেন। পীরগঞ্জে বিএনপির যে শক্তিশালী ভিত্তি এখনো টিকে আছে, তার পেছনে তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও নেতৃত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।

অন্যদিকে, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কামাল আহম্মেদ আনোয়ার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তার বিরুদ্ধে ৭৯টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। ত্যাগ ও আদর্শের এমন উদাহরণ মাঠের কর্মীদের কাছে তাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে পরিচিত কামাল আহম্মেদ আনোয়ার, যিনি নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম জিয়া দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। দলের আন্দোলন-সংগ্রামের কঠিন সময়গুলোতে তারা রাজপথে থেকেছেন, কর্মীদের সংগঠিত করেছেন এবং নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সময়ও তারা পিছু না হটে সংগঠনকে সচল রাখার চেষ্টা করেছেন।

এছাড়া আইনজীবী সমাজ থেকে আসা এড. জয়নাল আবেদিন ও ব্যারিস্টার রোকনুজ্জামান বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের প্রতীক হতে পারেন, যারা নীতিগতভাবে দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। একইভাবে, রাণীশংকৈল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল ওয়াদুদ বিন নূর আলিফ স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এবং সংগঠন শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখছেন।

এখন মূল প্রশ্ন হলো—এই আসনে মনোনয়ন কে পাবেন?

বিএনপি দল হিসেবে যেহেতু দীর্ঘবছর কঠিন সময় পার করেছে। তাই মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ত্যাগ, সাংগঠনিক গ্রহণযোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা এবং মাঠে লড়াই করার সক্ষমতা’এই চারটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।
অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠিত নেতা জাহিদুর রহমান এর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা ও ভোটারদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তাকে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। তবে বিএনপির ভেতরে এখন একটি নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বও শক্তভাবে আত্মপ্রকাশ করছে। সেই তরুণ ও উদ্যমী নেতাদের মধ্যে যদি কেউ মাঠপর্যায়ে কর্মীদের আরও সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন, তবে তার পক্ষে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকায় অল্প কিছু আসনে দুইয়ের অধিক প্রার্থীকে রাখা হয়েছে। এর বাইরে অধিকাংশ আসনেই একক প্রার্থী বাচাই করতে সক্ষম হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বাচাই করা এসব প্রার্থীর ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জানানো হতে পারে।

জানা গেছে, মনোনয়ন বোর্ডে উত্থাপিত তালিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারপরও প্রতিটি আসনে প্রার্থী বাচাইয়ের ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ একক মতামতের ভিত্তিতে কাউকেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সূত্র জানায়, দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া নেতাদের বিষয়েও স্থায়ী কমিটি বা মনোনয়ন বোর্ড মতামত দিতে পারবে এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে বাচাই করা প্রার্থীর মনোনয়নও পরিবর্তন করা হতে পারে।