প্রায় নব্বই বছর বয়সী শায়লো বেওয়ার স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। অন্যের জমিতে কোন মতে খড়ের ঘড়ে একাই বসবাস করেন এ নিঃসন্তান বৃদ্ধা। বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়েছেন। শরীরে বাসা বেধেছে নানা রোগের। কানেও একটু কম শোনেন। আয়-রোজগারের তেমন উপায় না থাকায় চলেন অন্যের দয়ায়। ঠিকমতো দুই বেলা খাবারও জোটে না তার। কখনও কখনও অনাহারেও থাকতে হয় তাকে।
শায়লো বেওয়ার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ১ নং ভোমরাদহ ইউনিয়নের ভোমরাদহ শাহ্ পাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত গোপাল চন্দ্রের স্ত্রী। স্বামী মারা গেছেন দেশ স্বাধীনের পর পরই। স্বামীর মৃত্যু পর বেশ কয়েক জন ব্যাক্তির জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে শরাজ চন্দ্র রায় নামে এক ব্যাক্তির জমিতে খড়ের ঘড়ে মাথা গোজাঁর ঠাই হয়েছে তার। তার এক শতাংশ জমি নেই, ভুমিহীন । সহায় সম্বল বলতে দুইটি ছাগল রয়েছে তার। তাও আবার একটি অন্য জনের কাছ থেকে আধি নিয়ে পালছেন। অন্যের কাছ থেকে বাশঁ চেয়ে নিয়ে ও ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে কয়েক বছর আগে ঘড়টি তৈরী করেছিলেন। বর্তমানে তা জীর্ণ শীর্ণ। বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে বৃষ্টি পড়ে অনায়াসে। কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে মেঝে। সে ঘরের মধ্যেই রয়েছে রান্না করার জন্য চুলা। রাখেন খড়ি ও ছাগল। সেই ঘরেই ছেড়া মাদুর বিছিয়ে কোন মতে রাত্রি যাপন করেন।
শায়লো বেওয়া জানান ‘অন্যের কাছ থেকে ছাগল আধি নিয়ে লালন পালন করে একটি ছাগল (পাঠা) ভাগ পেয়েছিলেন। সেই পাঠা ছাগল প্রজননের কাজে লািিগয়ে সপ্তাহে বা পনের দিনে দুই/তিন’শ টাকা আয় হয় তার। পাঠার আয় দিয়ে কোন রকম পার করছেন জীবন। পাঠার মাধ্যমে আয় না হলে কখনো অন্যের কাছ থেকে চেয়ে-চিন্তেও দিন কাটাতে হয় তাকে। পাঠা ছাড়াও এখনো অন্যের একটি ছাগল পালন করছেন তিনি। কান্না জড়িত তিনি কন্ঠে বলেন, “অন্যের ছাগল পালন করে কোন রকম দিন পার করছি, স্বামী ছেলে সন্তান থাকলে তাকে এ দুঃখে কষ্ট পোহতে হতো না”।
তবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভূমিহীনদের উপহারের ঘরে যেতে চান না তিনি। তার ভয় হয়, রাতের বেলায় সেই ঘরে মারা গেলে দেখার মতো কেউ নেই তার। এ জন্য সরকারী ঘড়ে যেতে চান না।
স্থানীয় বাসিন্দা বিলকিস বেগম জানান, নিঃসন্তান বিধবা শায়লোর স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি মানুষের জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করে আসছেন।অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তার। সরকারি, বে- সরকারি সংস্থা গুলোর সহযোগিতা পেলে তিনি অন্তত দুই মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন। তিনি আরো জানান, শায়লোর গোসল ও পানি পান করার জন্য কোন ব্যাবস্থা ছিল না। তিনি একটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন শায়লোকে। এখন প্রয়োজন তার থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বিছানা, টয়লেট ও চিকিৎসার। ভোমরাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিটলার হকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, নিঃসন্তান শায়লো অনেক কষ্টে আছেন। তাকে বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা আসলে তাকে দেওয়া হয়।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার নজির জানান, সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা আসলে অবশ্যই তাকে দেওয়া হবে।