পীরগঞ্জ হাসপাতালে ১৫ বছর পর নতুন এক্স-রে মেশিন, টেকনোলজিষ্ট ডেপুটেশনে থাকায় সেবা বঞ্চিত রোগীরা
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এক্স-রে) আব্দুর রাজ্জাক ডেপুটেশনে ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত থাকায় এ হাসাপাতালের নতুন এক্স-রে মেশিনটি চালু করা যাচ্ছে না। তার ডেপুটেশন বাতিল করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার পত্র দিলেও তা বাতিল করা হচ্ছে না। এতে প্রায় এক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পরে থাকা নতুন এক্স-রে মেশিনটি একদিকে যেমন নষ্ট হতে বসেছে অন্যদিকে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। রোগীদের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে এক্স-রে করাতে হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা হাসপাতাল ব্যকস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি ব্যাপক আলোনায় এসেছে। অবশ্য হাসপাতাল কতৃপক্ষ ঐ মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের বেতন ভাতা গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে বন্ধ রেখেছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুর রহমান সোহান জানান, এ হাসপাতালের ৫০ এমএম ক্ষমতাসম্পন্ন এক্স-রে মেশিনটি জোড়া তালি দিয়ে চালানো হচ্ছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুলাই মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে। ঢাকার এশিয়া মেড কোম্পানির দুজন প্রকৌশলী ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এসে মেরামতের চেষ্টা করেন। মেরামত সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা এটিকে সম্পূর্ণরূপে অকেজো ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই হাসপাতালে এক্্র-রে কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এক্স-রে মেশিন খারাপ থাকায় ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর এ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এক্্র-রে) শুকুর আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হামপাতালে বদলি করা হয়। একই সাথে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (এক্স-রে) আব্দুর রাজ্জাককে পীরগঞ্জ হাসপাতালে বদলি দিয়ে ডেপুটেশনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই কাজ করার আদেশ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক। তখন থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে কর্মরত আছেন আব্দুর রাজ্জাক। এদিকে এক্স-রে মেশিন নষ্ট হওয়ার র্দীঘ ১৫ বছর পর গত বছরের ১৬ এপ্রিল পীরগঞ্জ হাসপাতালে একটি নতুন প্রটোকল এক্্র-রে মেশিন সরবরাহ করেন কর্তৃপক্ষ। মেশিনটি এক্স-রে কক্ষে সেট আপও করা হয়। কিন্তু এ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আব্দুর রাজ্জাক ডেপুটেশনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত থাকায় এখানে এক্্র-রে কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। আব্দুর রাজ্জাকের ডেপুটেশন বাতিল করে তাকে পীরগঞ্জে ফিরিয়ে দিতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার উদ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার ডেপুটেশন বাতিল করা হচ্ছে না। চিঠি দেয়ার পরও ডেপুটেশন বাতিল না হওয়ায় রাজ্জাকের বেতন ভাতা গত ফেব্রুয়ারী থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে।
নতুন এক্স-রে মেশিনটি স্থাপনের প্রায় এক বছর ধরে ব্যবহার না হওয়ায় সেটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালের রোগীদেরও অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এক্্র-রে করতে হচ্ছে। সুত্র জানায়, এ হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন’শ থেকে ৪শ রোগীকে বিভিন্ন কারনে এক্্র-রে করানোর জন্য বাইরে পাঠানো হয়। এতে রোগীর স্বজনদের বাড়তি খরচ ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল জব্বার বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্টকে( এক্স-রে) নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। নতুন এক্স-রে মেশিনটি চালানোর জন্য রাজ্জাকের ডেপুটেশন বাতিল করতে কতৃপক্ষের কাছে অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর হতে চলেছে, এক্্র-রে মেশিনটি চালানো যাচ্ছে না। এতে মেশিনটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। এমপি মহোদয় বিষয়টি দেখতে চেয়েছেন। আমরা রাজ্জাকের বেতন ভাতা আপাতত বন্ধ রেখেছি।
উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ জানান, জনস্বার্থে মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের ডেপুটেশন বাতিল করে এখানে ফিরিয়ে দিতে অথবা তাকে এখান থেকে বদলি করে তার স্থলে অন্যজনকে দেয়া জরুরী হয়ে পরেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে তিনি কথা বলবেন বলেও জানান এ আইন প্রনেতা।