ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। ভোটের মাঠে প্রার্থীরা এখন ভোট কেনা-বেচায় নেমেছেন। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় না করতে পেরে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে নেমেছেন বড় দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরা। বিষয়টি দৃশ্যমান না হওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও আলোচনায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে অব্যাহতি ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কারের ঘটনা। সবমিলিয়ে পৌষের শীতকে হার মানিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ গরম হয়ে উঠেছে।
পৌরশহরের যগথা,রঘুনাথপুর,গুয়াগাঁও সহ কয়েকটি এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় দলগুলোর মেয়র প্রার্থীদের কর্মীরা টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে তাদের বাড়িতে যাচ্ছেন।এরপর ভোটার প্রতি ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে বাড়ির সব ভোট মিলিয়ে ১০০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে ভোট দেওয়ার ওয়াদা নিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। এতে কোনো কোনো ভোটার টাকা নিয়ে ভোট দেওয়ার ওয়াাদা করছেন। আবার অনেক সচেতন ভোটার মেয়র প্রার্থীদের কর্মীদের টাকাসহ ফিরিয়েও দিচ্ছেন। সচেতন ভোটাররা বলছেন, যোগ্য ব্যক্তিকেই তারা মেয়র হিসেবে নির্বাচনের জন্য ভোট দিবেন। সামান্য টাকা দিয়ে ভোট তারা অযোগ্য প্রার্থীদের দিবেন না।তারা চান পৌরসভার উন্নয়ন।
যগথা এলাকার ভোটার মফিজুল হক বলেন,‘এবারের ভোট ভেবেই দিব।যিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন,নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন তাঁকেই ভোট দিব। টাকা দিয়ে ভোট কারো কাছে বিক্রি করব না।’ রুবেল নামে আরেক ভোটার বলেন,‘ভোটের মাঠে টাকা উড়ছে। টাকা দিয়ে এখন আর ভোট কেনা যায় না এটা তো প্রার্থীরা বুঝে না।যোগ্য ব্যক্তিই ভোট পাবে।’ সাগর ইসলাম নামে আরেকজন বলেন,‘ আমাকে এক মেয়র প্রার্থী কর্মীরা টাকা দিতে এসেছিল তাদের ফিরিয়ে দিছি।টাকা দিয়ে আমার ভোট বিক্রি করব না।’ টিএনটি রোড এলাকার বাসিন্দা আনারুল বলেন,‘রাস্তার সমস্যা,ড্রেনের সমস্যাসহ পৌর এলাকাকে মাদকমুক্ত যেই করতে পারবে সেই ভোট পাবে।’ টাকা দিয়ে ভোট কেনার বিষয়ে বড় দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরা কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
পীরগগঞ্জ পৌর সভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে বর্তমান মেয়র কশিরুল আলম, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীকে রেজাউল করিম রাজা, জাতীয়পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে অধ্যাপক তৈয়ব আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাতপাখা প্রতীকে হাফিজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইকরামুল হক লড়ছেন নারিকেল গাছ প্রতীকে এবং জগ প্রতীকে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদিন লড়ছেন। যদিও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের দলীয় সব পদ থেকে ইকরামুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর জয়নাল আবেদিনকে বিএনপির দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রথম শ্রেণির পীরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন। এ পৌর সভায় মোট ভোটার ২১ হাজার ১৭৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৪৭জন আর মহিলা ১০ হাজার ৬৩২জন। ৬ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিন্দ›িদ্বতা করছেন ৩২জন কাউন্সিলর ও ১২জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী।
প্রথম ধাপের নির্বাচনে এই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে হবে ভোট গ্রহণ। তাই সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় রির্টানিং কর্মকর্তা জিলহাস উদ্দিন। তিনি বলেন, সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।আর টাকা দিয়ে ভোট কেনার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।