প্রতিবছরের মতো এবারো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীর বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরার উৎসব। শনিবার ভোরের দিকে বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় এই এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন আশে পাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতে ব্যস্ত। এদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। বাদ যাননি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। কারও হাতে পলো, কারও হাতে চাবিজাল, খেয়াজাল, টানাজাল বা ছেঁকাজাল। যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও বসে নেই। খালি হাত দিয়েই কাঁদার মধ্যে মাছ খুঁজছে। আর নদীর পাড়ে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছে মাছ ধরা দেখতে। অনেকে মাছ না ধরলেও বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের উৎসাহ দিচ্ছেন।
জানা যায়, ১৯৮০ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য সদর উপজেলার আচকা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর উপর একটি জলকপাট (সুইসগেইট) নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন থেকে মাছ ধরতে এসেছেন গনি মিয়া। তিনি বলেন, মাছ ধরা উৎসবের কথা শুনে গতকাল রাতে এখানে এসেছি। পুঁটি মাছ,গুড়া মাছ, মাছ জালে আটকা পড়তে দেখেছি। তবে গতবারের মতো এবারে তেমন কোন মাছ নেই।
শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে মাছ ধরতে এসেছেন আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, সকাল থেকেই মাছ ধরছি। জাল নিয়ে আমরা তিনজন এসেছি। মাছ খুব একটা ধরা পড়ছে না। কারণ অনেক মানুষ জাল ফেলেছে। তারপরও চেষ্টা করছি। যা পাবো বিক্রি করে দিবো।
রুহিয়া ইউনিয়ন থেকে মাছ কিনতে আসা বিপ্লব বলেন, প্রতিবারেই এখানে মাছ কিনতে আসি। কিন্তু এখানে নদী থেকে কম বাহির থেকে অনেকে মাছ নিয়ে এসে বিক্রি করছে। সেই সাথে দাম বেশি চায়।
ঠাকুরগাঁও আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন জানান, মাছ ধরার উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারও মানুষের ঢল নেমেছে। এখানে কেউ মাছ ধরতে আসেন। কেউ বা আসেন মাছ ধরা দেখতে আবার কেউ আসেন কম দামে মাছ কিনতে। সেই যাই হোক এ সময় পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান,প্রতিবারেই এই বুড়ির বাঁধ এলাকায় আমাদের উদ্যোগে পোনা ছাড়া হয়। এটি আমরা জুলাই মাসের দিকে দিয়ে থাকি এবং শীতের শুরুতেই আবার বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।