নারী উদ্যেক্তাদের পথিকৃৎ সেতু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২২

পড়াশোনা শেষ করে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ভাল চাকরী করার আগ্রহ প্রকাশ করেন কিন্তু চাকরীর সুযোগ পেয়েও না করে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। চাকরীর পেছনে না ছুটে “ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার” গ্রুপ খুলে দিশেহারা নারী উদ্যোক্তাদের অলোর পথ দেখাচ্ছেন সানজিদা শারমিন সেতু। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নারী উদোক্তা তৈরীও করছেন তিনি। যা এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জানা যায়, করোনা থাবা ও দীর্ঘদিন লক ডাউনের কারণে ঠাকুরগাওয়ের ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের পন্য কেন-বেচায় ধস নামে। দিশেহারা হয়ে পড়েন অনেকে। এ অবস্থায় সানজিদা শারমিন সেতু ২০২০ সালের ১৪ মে “ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার” গ্রুপ খুলে অনলাইন ব্যবসা ও প্রশিক্ষন শুরু করেন। দ্রুত সফলতা লাভ করে গ্রুপটি। বর্তমানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ৫৬ হাজার। প্রতিনিয়ত গ্রুপের সদস্যদেরা তাদের হাতে তৈরী পণ্য গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করে সফল হয়েছেন অর্ধশতাধিক নারী উদোক্তা ও লাখপতি হয়েছেন অনেকে। গ্রুপটির “নিড” নামে রয়েছে প্রশিক্ষণ প্রকল্প। সেতুর নিজস্ব ভাড়া বাসায় “নিড” নামে নারী উদোক্তা তৈরী করতে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে তুলে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ সনদ।


সফল নারী উদ্যোক্তা মরিয়ম মেরী বলেন, গ্রুপের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করি। পরে পাট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরী শুরু করি। গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবসা করতে পেরে আমি অনেক লাভবান হয়েছি।
আরেক সফল নারী উদোক্তা সূবর্ণা রায় বলেন, আমি গ্রুপে হাতে তৈরী গয়না নিয়ে কাজ করি। এত অল্প সময়ে এত সুন্দর ব্যবসা করতে পারব কল্পনা করিনি। এই গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবসা করে সফল হয়েছি।
গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন বিউটিশিয়ান লাভলী আক্তার। তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁও শহরে আমার লাভলী বিউটি পার্লার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠান আছে। করোনায় আমার ব্যবসায় ধস নামে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ঠিক তখনি ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার গ্রুপটি আমার চোখে আসে। সেটির মাধ্যমে আমি ব্যবসা করে সফল হয়েছি। আমি সানজিদা শারমিন সেতু আপু সহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
গ্রুপের মডারেটর ফারিয়া ওয়াদুদ মোমো বলেন, করোনা কালীন সময়ে আমরা নিজেই নানা মুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। সেখান থেকেই আমরা ভাবলাম অনেকে এ ধরনের সমস্যার মুখে পরছে। তার পরে ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফরম গড়ে তুলি। যেখানে বাসায় বসে উদ্যোক্তারা পন্য তৈরী গ্রুপের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন। আমাদের গ্রুপের মাধ্যমে ব্যবসা করে অনেকজনে সফল ও লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে আমাদের ৫৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। এখান থেকে ব্যবসা করে অর্ধশতাধিক নারী উদোক্তা সফল হয়েছেন। আমরা আরও নতুন নারী উদোক্তা তৈরীতে নিড প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি।

গ্রুপের প্রধান এডমিন সানজিদা শারমিন সেতু বলেন,করোনা কালীন সময়ে ঘরে বসে উদ্যোক্তারা যেন উনাদের পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারেন- সেজন্য আমি ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার নামে একটি প্ল্যাটফরম গড়ে তুলি। গ্রুপের মাধ্যমে আমরা নতুন নারী উদোক্তা তৈরীতে নিড প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গ্রুপে শতাধিক নারী উদোক্তা আছেন। আমি আমার ভাড়া বাসায় নিজ রুমে প্রশিক্ষণ দেওয়াচ্ছি। আশা করছি গ্রুপটির মাধ্যমে হাজারো উদ্যোক্তা তৈরী হবে। আমরা এ পথচলার অগ্রগতির জন্য জেলা প্রশাসক সহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

উদ্যোক্তাদের কাজ পরিদর্শন করে বিসিক ঠাকুরগাঁও এর উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ নুরেল হক বলেন, ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার উদ্যোক্তা তৈরীতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। যেটি যুগোপযোগী বলে আমি মনে করি। তাদের যে কর্মস্পৃহা এটি আরও নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতে সূদুর প্রসারি ভূমিকা রাখবে। আমরা যেহেতু উদ্যোক্তা তৈরীতে কাজ করছি। বিসিক ঠাকুরগাঁওয়ের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা থাকবে।
নারী উদোক্তাদের পণ্য পরিদর্শন করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার জেলার সবচেয়ে বড় অনলাইন প্ল্যাটফরম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। কিভাবে আরও নতুন নারী উদোক্তা তৈরী করা যায় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি “ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার”এর উদোক্তাদের মাধ্যমে জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।