ঠাকুরগাঁওয়ে ২ শিশুসহ মায়ের লাশ: চিঠিতে লেখা ‘আহারে জীবন’

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২০

ঠাকুরগাঁওয়ে দুই শিশুসহ মায়ের লাশ উদ্ধারের পর বাড়ি থেকে দুই পৃষ্ঠার চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জেলার রাণীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল জানান, শুক্রবার বিকালে তারা চিঠিটি উদ্ধার করেন।

বৃস্পতিবার সকালে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে বাড়ির সামনে পুকুর থেকে আকবর আলীর স্ত্রী আরিফা বেগম (৩২), মেয়ে আখলিমা আখতার আঁখি (১০) ও ছেলে আরাফত হোসেনের (৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আরিফার ঘরে তার মেয়ের বই-খাতা দিয়ে চাপা দেওয়া অবস্থায় একটি চিঠি খুঁজে পায় পুলিশ।

ওসি জাহিদ বলেন, “দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে আরিফা বেগম লিখে গেছেন, ‘আহারে জীবন। সংসারের অভাব, অশান্তি আর ভালো লাগে না। আমি একাই চলে যেতাম, কিন্তু একা গেলে আমার বাচ্চারা মা মা বলে হাহাকার করবে। এজন্য ওদের নিয়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। “আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমি নিজেই আত্মহত্যা করিলাম। এটা সত্যি একশবার, একশবার, একশবার।”ওসি বলেন, “চিঠিতে আরিফা তার স্বামী আকবরকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছেন, ‘স্বামী, তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নাই। আমার বিয়ের মোহরানা মাফ করে দিলাম। তুমি ভালো থেকো।’ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে উদ্দেশ্যে করে আরিফা লিখেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করছি। এজন্য মাফ চাই’।”ওসি বলেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে অভাব-অনটন ও সংসারে অশান্তি ছিল আরিফার। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন তিনি। তাই মেয়ে ও ছেলেকে বিষাক্ত কোনো কিছু খাইয়ে পরে নিজে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে পুলিশ নিশ্চিত না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পেলে জানা যাবে।

লাশ উদ্ধারের পর স্বামী আকবর আলী, শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম ও দেবর বাবর আলীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান ওসি।

আরিফার স্বামী আকবর আলী বলেন, “অভাব-অনটনের সংসারে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া-বিবাদ হয়েই থাকে। মঙ্গলবার একটি ঋণদান সংস্থা থেকে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে আরিফার সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় ঝগড়া হয়। অভাবের কারণে আরিফা সব সময় বলত, ‘আমি তোমার বাসায় থাকব না। যেখানে যাই, আমি ছেলেমেয়েকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাব।’ কিন্তু ছেলেমেয়ে নিয়ে এভাবে চলে যাবে বুঝতে পারিনি।”

ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মাইনুদ্দিন বলেন, আরিফার স্বামী আকবর ফেরি করে জিনিস বিক্রি করেন। ইদানী তার ব্যবসা ভাল যাচ্ছিল না। এতে সংসারে আরও অভাব দেখা দেয়। অভাব-অনটনের কারণে আকবর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হত। ঘটনার দিনও বাবার কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়ায় আকবরের সঙ্গে তার বাবার ঝগড়া হয়। সে সময় আরিফা স্বামীর পক্ষ নিয়ে শ্বশুরের সঙ্গে ঝগড়া করেন। পরে এ ঘটনা নিয়ে আকবর ও আরিফার মধ্যেও ঝগড়া হয়। এই ঝগড়ার পরই আরিফা এ ঘটনা ঘটান। আত্মহত্যার আগে আরিফার লেখা চিঠি উদ্ধারের পর পুলিশ সেই চিঠি পড়ে শোনায়। চিঠিতে তাদের সংসারে অভাব-অনটনের কথা উঠে এসেছে।

চিঠির সত্যতা বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, উদ্ধার করা চিঠিটি আরিফার নিজের লেখা কিনা তা নিশ্চিত হতে যাচা করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে পুলিশ।
সূত্র:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম