সাপ নিয়ে যত কুসংস্কার, বিজ্ঞান যা বলে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০২০

বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমে সাপে কাটার প্রকোপ বেড়ে যায়। টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ১০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। কিন্তু বিষধর সাপের সংখ্যা খুবই কম। তবে সাপের দংশনে মৃত্যুর সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রতি বছর অন্তত পাঁচ লাখ আশি হাজার মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন এবং অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যান।

পৃথিবীতে বিষধর সাপ রয়েছে ২৬ প্রজাতির, এর মধ্যে ১২ প্রজাতিই হচ্ছে সামুদ্রিক সাপ। আর বাংলাদেশে সাত প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে যেগুলোর দংশনে মৃত্যু হতে পারে। এতো কম বিষধর সাপ থাকলেও মোটামুটি বিপুল সংখ্যক মানুষকেই মৃত্যুবরণ করতে হয় সাপের দংশনে। এর কারণ কী হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সভাপতি ডা. মো. আবুল ফাইজ বলেন, বাংলাদেশে গ্রাম এলাকায় প্রচুর মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়। এর বেশ কিছু কারণ আছে। গ্রামে বিষধর সাপ বেশি দেখা যায়। এছাড়া সাপ দংশন করলে মানুষ এখনও প্রথমে ওঝার কাছে যায়। তন্ত্রমন্ত্রে যখন কাজ হয় না তখন শেষ মুহূর্তে আসে চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম বলেন, সাপ নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু কুসংস্কার প্রচলিত আছে। আর একারণে মৃত্যুর হারও বেশি এবং ওঝা বা কবিরাজের কাছে চিকিৎসার জন্য মানুষ যায়ও বেশি। তিনি প্রচলিত বেশ কিছু কুসংস্কার তুলে ধরেন এবং এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আলোচনা করেন।

ড. আব্দুল আলিম বলেন, বাংলা সিনেমায় আমরা দেখি বিন বাজালে সাপ নাচে। বাস্তবে এমন আচরণ সাপ করে না। সাপের কোনো বহিঃকর্ণ নেই, সেজন্য বায়ুবাহিত শব্দ নিখুঁতভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তবে মাটি বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে অন্তঃকর্ণ গ্রহণ করতে পারে।

এক জায়গায় একটি সাপ মারলে তার জোড়া সঙ্গী কখনোই আপনাকে খুঁজে দংশন করতে আসবে না। সিনেমায় যা দেখানো হয় তা শুধুই কাল্পনিক। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু একটা সাপ মারার পর আরেকটা সাপ প্রায়ই একই স্থানে দেখা যায়। এর কারণ হতে পারে মেটিং এর সময় তাদের পার্টনার আশেপাশে থাকতেই পারে কিংবা আশেপাশে গর্ত থাকলে তার বাচ্চাকাচ্চা কিংবা আরো সাপ উঠে আসতেই পারে। সে প্রতিশোধ নিতে আসেনি বরং ভুল করে গর্ত থেকে চলে এসেছে।

ছোট সাপের বিষ নেই, কথাটি সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে, সাপের বাচ্চাও সাপ। কেঁচোর সমান একটা কেউটের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে। জেলেদের সাপ বেশি দংশন করে। এর কারণ জেলেরা রাতে আইলে, নদীর কিনারে হেঁটে হেঁটে জাল ফেলে মাছ ধরে। ফলে জেলের পায়ের নিচে সাপ পড়লে কিংবা সাপ নিজে ভয় পেলে দংশন করে।

সাপ দুধ খায়, গরুর দুধ খেতে গোয়াল ঘরে চলে আসে- এমন ধারণাও ঠিক নয়। সাপ মাংসাশী প্রাণী। এরা ইঁদুর, ব্যাঙ, পোকা-মাকড় খায়। বিশেষ করে দাঁড়াশ সাপকে কৃষকের উপকারী বন্ধু বলা যেতে পারে। অনেকেরই ধারণা, দাঁড়াশ সাপ লেজ দিয়ে আঘাত করে এবং এই আঘাত যেখানে লাগে সেখানে পচন ধরে বা মানুষ মারা যায়। কিন্তু এই ধারণা সঠিক নয়। এটি নির্বিষ সাপ এবং মূলত ইঁদুর খেয়ে কৃষকের জমির ফসল রক্ষা করে থাকে।

দংশন করা সাপকে উল্টো কামড় দিলে বিষ ফেরত চলে যায় সাপের ভেতরে। এ কথারও কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এছাড়া বেলি বা হাসনাহেনা ফুলের গন্ধেও সাপ আাসে না। কেননা সাপের ঘ্রাণ শক্তি খুবই দুর্বল। তবে এসব গাছে সুগন্ধি ফুল থাকায় সেখানে পোকামাকড় বেশি আসে আর এসব পোকামাকড় খেতে হয়তো সাপ আসতে পারে।

ড. আব্দুল আলীম আরো বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ সাপই নির্বিষ। সাপ মারা উচিত নয়। সাপ বাস্তুতন্ত্রের অংশ। ঘরে সাপ পাওয়া গেলে সাপ উদ্ধারকারী কর্মীদের জানাতে পারেন।