জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিকেল ৫টার দিকে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আয়েশা আক্তার।
তিনি বলেন, এর আগে একবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়, তাতে নেগেটিভ আসে। আজকে আবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, সন্ধ্যার পর হয়তো রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে ধারণা করা হচ্ছে তিনি হার্টের সমস্যার জন্য মারা গেছেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান জানান, গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে বাবাকে ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেদিন আনন্দ জামান জানিয়েছিলেন- বাবাকে কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যার কারণে এপ্রিলের শুরুতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আবার ইউনিভার্সেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন বাবার হার্টে সমস্যা রয়েছে। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা রয়েছে। যার কারণে অতটা স্বস্তিদায়কও নয়।
এরপর গত ৯ মে ইউনিভার্সেল হাসপাতাল থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক, ভাষা সংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, সংবিধানের অনুবাদক, দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের অগ্রবর্তী মানুষ।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
শিক্ষায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৫ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাকে ভারত সরকার তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।
এছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুইবার আনন্দবাজার পত্রিকার ‘আনন্দ পুরস্কার’, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট. ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ দেয়।
এদিকে জাতীয় অধ্যাপক ও উপমহাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।