শীতের মিষ্টি সকালে ঢাকার কর্মব্যস্ত জীবন যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ঢাকায় বসবাসরত ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জবাসীরা আয়োজন করেছিল এক হৃদয়স্পর্শী মিলনমেলা—‘চড়ুইভাতি-২০২৫’।
পীরগঞ্জবাসীর জন্য এদিনটি ছিল শুধু আনন্দের নয়; এটি ছিল শেকড়ের টানে আত্মীয়তা আর বন্ধুত্বের উষ্ণতায় ডুবে যাওয়ার এক বিশেষ দিন। আয়োজক ঢাকাস্থ পীরগঞ্জবাসী কল্যাণ সমিতি এ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে, দূরত্ব যতই হোক, ভালোবাসার টান দূর করতে পারে সব বাধা।
সকাল ৮.৩০ থেকে শেকৃবির টিএসসি চত্বর সরব হয়ে ওঠে পীরগঞ্জবাসীর পদচারণায়। পরিবারের সঙ্গে আসা মানুষের চোখে-মুখে ছিল আত্মীয়তার উচ্ছ্বাস। দীর্ঘদিন পর পরিচিত মুখগুলোর দেখা পাওয়া যেন এক অমূল্য উপহার। এই মিলনমেলা শুধু একটি আয়োজন নয়; এটি মনের বন্ধ দরজা খুলে দেওয়ার উপলক্ষ।
শিশুদের জন্য দৌড় প্রতিযোগিতা, বুদ্ধিমত্তার খেলা—সব মিলিয়ে ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। আর নারীদের জন্য ছিল ‘বালিশ পাস’-এর মতো জনপ্রিয় খেলা, যা হাসি-ঠাট্টায় ভরিয়ে তুলেছিল মুহূর্তগুলো।
দুপুরে ছিল সমবেত ভোজন। একসঙ্গে বসে খাওয়ার মধ্যে ছিল এক ধরনের মধুরতা। খাবারের স্বাদ ছাড়িয়ে সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগির মুহূর্তগুলো ছিল আরও বিশেষ। একে অপরের সঙ্গে গল্প, হাসি আর স্মৃতিচারণ যেন ভোজকে রূপ দিয়েছিল বন্ধনের উৎসবে।
ভোজ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাণের মেলা বসে। পীরগঞ্জের গর্ব কণ্ঠশিল্পী জাহিনের সুরে শেকৃবির টিএসসি চত্বর মুখোরিত হয়ে ওঠে। সবাই তার সুরে গলা মেলায়, হাততালি দেয়, কেউবা নাচের তালে ভেসে যায়। পীরগঞ্জের কয়েকজনের পরিবেশিত গান ও কবিতা পুরো পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
ঢাকাস্থ পীরগঞ্জবাসী কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সোহেল রানা জানান, সমিতির উদ্যোগে প্রতি বছর এমন আয়োজনের পাশাপাশি তারা শিক্ষিত যুবকদের চাকরির সুযোগ তৈরি, ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা এবং রক্তদানসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন।
দিনের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ অংশ ছিল র্যাফেল ড্র। আকর্ষণীয় পুরস্কারের জন্য সবার মাঝে তৈরি হয় উন্মাদনা। বিজয়ীদের আনন্দের ঝলক ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবেশে। এর আগে সবাই মিলে তোলা গ্রুপ ছবিটি ছিল দিনের আরেকটি উজ্জ্বল স্মৃতি।
পীরগঞ্জের ব্যবসায়ী বাসিন্দা হাবিবুর রহমান নান্নু বললেন, “এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এমন আয়োজনে অংশ নেওয়া শুধু আনন্দের নয়, আত্মিক প্রশান্তিরও।”
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া বললেন, “এ ধরনের আয়োজন আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখে এবং সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।”
র্যাফেল ড্রয়ের পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে দিনের। তবে চড়ুইভাতি উৎসবের রেশ রয়ে যায় সবার মনে। এটি শুধু আনন্দঘন এক দিন নয়; বরং কর্মব্যস্ত জীবনে শেকড়ের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপনের একটি অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকলো বলে জানান উৎসবে অংশ নেয়া অনেকে। তারা মনে করেন, পীরগঞ্জবাসীর জন্য এটি প্রমাণ করেছে যে, দূরত্ব আর ব্যস্ততার মধ্যেও ভালোবাসা আর ঐতিহ্যের টান মানুষকে একত্রিত করতে পারে।