
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা পাড়িয়ার গ্রামের গামানিয়েল মুর্মুর স্ত্রী বাহামনি মুর্মু। ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি এখন একজন সফল হস্তশিল্পকর্মী। গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে পাপোশ সহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরী করে তিনি ভাল্য়ই আয় করছেন। সেই টাকা দিয়ে নিশ্চিন্তে চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তাদের লেখা-পড়ার খরচ। তাকে দেখে অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জানা যায়, তিনি একজন গৃহিনী। স্বামী দিন মুজুর। তাঁর এক মেয়ে এক ছেলে । বড় মেয়ে পীরগঞ্জ সরকারি কলেজে ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ছোট ছেলে বাঁশগাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র । তিনি পরিবারের কাজের পাশাপাশি পাপোশ তৈরি কাজ করছেন। শুধু পাপোশই নয় ওয়াল আলনা, মেয়েদের সাইট ব্যাব এবং ভ্যানিটি ব্যাগও তৈরি করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাহামনি বলেন, ২০ দিনের প্রশিক্ষন নিয়ে ৩ হাজার ৫ শত টাকা দিয়ে একটি মেশিন ক্রয় করে পাপোশ উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। ১ টি পাপোশ তৈরীতে খরচ হয় ১০ টাকা, কোম্পানীর নিকট বিক্রয় করেন প্রতিটি ২০ টাকা।
খুচরা বিক্রি ৩০-৪০ টাকা। পরিবারের কাজের পাশাপাশি দৈনিক ১০-১২ টি করে পাপোশ তৈরী করে থাকেন,যা থেকে দৈনিক ১০০ থেকে ১২০ টাকা আয় করছেন। শুধু এ কাজ করলে দৈনিক ৩৫-৪০ টি পাপোশ তৈরী করতে পারবেন। যা থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানা বাহামনি। তিনি আরো জানান, অর্থের অভাবে কাঁচা মাল (ঝুট ও সুতা) ক্রয় করতে পারছেন না। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পেলে এবং কোন সংস্থা ঋণ প্রদান করলে ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করতে পারবেন । উৎপাদন বেশি হলে আয় বৃদ্ধিও পাবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ী থেকেই প্রথম কেনা-বেচা শুরু করি। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দোকানে একটি সেলাইমেশিন কিনে মেয়েদের কিছু কিছু পণ্য তৈরি শুরু করি এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন কাপড় ও নিজস্ব ডিজাইন এবং মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের ইনার, কাপড়ের ব্যাগ ও কাঁথা তৈরি করে থাকি। দেশে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে চান আদিবাসী এ নারী।
তার পাশা পাশি একই গ্রামে আরও ১০ জন আদিবাসী নারী হস্তশিল্প পাপোশ তৈরি করেন থাকেন। তাঁরা বলেন, সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আদিবাসী নারীরা আরও এগিয়ে আসবে এবং ব্যবসায় সফলতা বাড়বে। আমরা এখন অনেক সভ্য। আমাদের ছেলে মেয়ে স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করেন।
এ ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও’র প্রেমদীপ প্রকল্পের কর্ম কর্মকর্তা রওশন জামাল চৌধুরী জানান, এ প্রকল্পটি আদিবাসীর উপর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকল্পটি ২৫ জন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি নারীকে এই প্রশিক্ষন প্রদান করেছেন। তারা প্রত্যেকে এখন উৎপানের সাথে জড়িত রয়েছে। অনেক আদিবাসী নারীর এ কাজে আগ্রহ বাড়ছে কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারনে ৩ হাজার পাঁচশত টাকা দিয়ে পাপোশ তৈরীর মেশিন ক্রয় করতে পারছেন না। সরকারি সহায়তা পেলে এ মাধ্যমে গ্রামীন দরিদ্র নারীদের মান উন্নয়ন ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।