দুয়ার খুললো ‘গর্বের’ পদ্মা সেতু

প্রমত্তা পদ্মার তীরে উন্মোচিত হল ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবির, দিকে দিকে উঠল জয়বাংলা স্লোগান; বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বললেন, “এই সেতু শুধু একটি সেতু নয়, এই সেতু দুই পাড়ের যে বন্ধন সৃষ্টি করেছে তা নয়, এই সেতু শুধু ইট, সিমেন্ট, স্টিল, লোহা, কংক্রিটের একটা অবকাঠামো নয়, এই সেতু আমাদের অহংকার, এই সেতু আমাদের গর্ব। এই সেতু আমাদের সক্ষমতা, আমাদের মর্যাদার শক্তি।

“এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয় যে আমরা এই সেতু তৈরি করবই। সেই জেদ, সেই প্রত্যয়।”

স্বপ্ন বোনার শুরুটা হয়েছিল দুই যুগ আগে; নানা টানাপড়েন আর অপপ্রচার পেরিয়ে, ষড়যন্ত্র আর প্রতিকূলতা প্রতিহত করে এ দেশের মানুষের টাকায় বাস্তব রূপ পেয়েছে পদ্মা সেতু।

শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানালেন শেখ হাসিনা, বললেন, জনগণের সমর্থন আর সাহসেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি করা সম্ভব হয়েছে।

এই সেতু যে কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে- তাই না, পুরো দেশের সামনে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার, যে পথ ধরে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এবং পরে সেতু পেরিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। দুই দশক আগে তিনিই দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্নের এ সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। সেতুতে টোল দিয়ে তিনিই এ সেতুর প্রথম যাত্রী হয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে পদ্মার দুই তীরের তিন জেলার পাশাপাশি সারা দেশেই ছিল উৎসবের রঙ। বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশ সাজানো হয় অসংখ্য ব্যানার-ফেস্টুনে, যেখানে শোভা পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।

পদ্মাপাড়ের আনুষ্ঠানিকতা সাজানো হয়েছিল মূলত দুই ভাগে। মাওয়ায় রাষ্ট্রীয় আয়োজনে হয় সুধী সমাবেশ, যেখানে সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, কূটনীতিকসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

এই সমাবেশ থেকেই পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খাম উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেতুর দুই তীরে ফলক উন্মোচন করে সারেন উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা।

পরে তিনি যোগ দেন মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগের বিশাল সমাবেশে। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকেও বাস, আর লঞ্চে করে কয়েক লাখ মানুষ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন সকাল থেকেই। কোনো অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে এত বড় উৎসব, এত বড় আয়োজন আর কখনও বাংলাদেশ দেখেনি।

বলা হয়েছিল, শনিবার উদ্বোধন হলেও এ সেতুতে ওঠার সুযোগ সবার থাকবে না। রোববার পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শিবচরে থাককেই সেতুর দুই প্রান্তে উৎসুক জনতার ঢল নামে। কাউকে কাউকে রেলিংয়ে উঠে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। পরে তাদের সরাতে সক্রিয় হতে হয় পুলিশকে।