ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সনদ বিহীন ভুয়া প্রাণি চিকিৎসকদের দৌরাত্ব কোন ভাবেই কমছে না। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই দাপটের সাথে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য গরু-ছাগল। ভুল চিকিৎসায় কৃষকের গরু মেরে ফেলার অভিযোগে এক পল্লী প্রাণি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আবারো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্নি দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছেন, শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগে জানা যায়, ডাক্তারী সনদ ছাড়া কোন প্রাণি চিকিৎসক প্রাণির চিকিৎসা দিতে পারবেন না মর্মে প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে পত্র দেওয়া হলেও পীরগঞ্জ উপজেলায় সনদ ছাড়াই প্রায় অর্ধশত পল্লী প্রাণি চিকিৎসক গরু-ছাগলের চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য গরু ছাগল। এসব পল্লী প্রাণি চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় কয়েকজন কৃষক ও খামারীর বেশ কিছু গরু মারা যাওয়ায় উপজেলার অর্ধ শত পল্লী প্রাণি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে আদালতে মামলা করেন আব্দুল মোতালেব নামে এক খামারী সহ আরো দুই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। মামলাগুলি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় ঐসব পল্লী প্রাণি চিকিৎসক প্রাণির চিকিৎসা দিতে পাবেন না মর্মে এরই মধ্যে আবারো প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে পত্র দেওয়া হয়েছে। তার পরেও থেমে নেই তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম। তারা প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেল হাকিয়ে নিজেদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে গ্রাম-গঞ্জের সহজ সরল মানুষদের ভুল ভাল বুঝিয়ে গরু-ছাগলের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করছেন না তারা। তাদের ভুল চিকিৎসা মারা যাচ্ছে গরু-ছাগল। অবশ্য কিছু কিছু গরু-ছাগল আবার ভালোও হচ্ছে।
উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের মোহন চাঁদ সরকারের ছেলে কৃষক রনজিত কুমার রায়ের একটি আড়িয়া গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলার নানুহার গ্রামের এক পল্লী চিকিৎসক গরুটির চিকিৎসা প্রদান করেন। কয়েক দিন চিকিৎসা দেওয়ার পরও গুরুটি সুস্থ না হলে গত বুধবার উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের আসেন ঐ কৃষক। সেখান থেকে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনোরঞ্জন ঐ কৃষকের বাড়িতে যান। গুরুটির অবস্থা আশংকা জনক দেখে কোন চিকিৎসা না দিয়েই অফিসে ফিরে আসেন ঐ কর্মকর্তা। পরদিন বৃহস্পতিবার গরুটি মারা যায়। এর প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কৃষক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লী চিকিৎসক নুরুল জানান,কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত ডাঃ সোহেল রানা বলেন, নিষেধ করার পরও ডাক্তারী সনদ ছাড়া অনেকেই গরু ছাগলের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ভুল চিকিৎসায় গরু-ছাগল মারা যাওয়া খবর তিনিও পাচ্ছেন। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, পল্লী চিকিৎসকরা ডাক্তারী করতে পারবে না। নুরুল সাহেব চিকিৎসা দিয়ে ভুল করেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির জানান, ভুল চিকিৎসায় গরু মেরে ফেলার অভিযোগ তিনিও পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই ঐ সব পল্লী প্রাণি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবারসংবাদ২৪.কম