জেলা শহর ঠাকুরগাঁও থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রাঘবেন্দ্র জমিদার বাড়ি। যত্ন আর সংস্কারের অভাবে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ধসে গিয়েছে ভবনের একটি অংশ ।
স্থানীয় যুবক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদিার বাড়িটি যেন সংস্কার করা হয়। আর এর জন্য তারা নানা রকম কর্মসূচীও পালন করেছিলো । তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ময়লা স্তুপে পরিণত হওয়া সেই জমিদার বাড়িটি পরিস্কার করেছিলো নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে। করেছিলো ফুলের বাগান। পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়েছিলো সে সময়ে। এটি ধসের সাথে সাথে তার ছাপ পড়েছে সেই সব শিক্ষার্থীদের মনে। যারা এক বুক আশা নিয়ে হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি আগলে রাখতে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সংস্কার কাজে নেমেছিলো।
১৪০০ খ্রীঃ পূর্বে মুসলিম শাসনামলে হরিপুর উপজেলার খোলড়া পরগনার অন্তর্গত ছিল । মেহেরুন্নেছা ওরফে কামরুন নাহার নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলার ওপর ছিল এ পরগনার জমিদারি । খাজনা অনাদায়ে জমিদার মেহেরুন্নেছার জমিদারির অংশবিশেষ নিলামে উঠলে কাপড় ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম কুন্ডু তা কিনে নেন । ঘনশ্যাম কুন্ডুর পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায়। তিনি ১৮৯৩ সালে রাজবাড়ীর নির্মাণ কাজ শুরু করেন । তার পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে রাজবাড়ীর নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
ভবনটির পূর্ব পাশে শিব মন্দির ও মন্দিরের সামনে ছিল নাট্যশালা । এখানে একটি বড় পাঠাগারও ছিল। রাজবাড়ীর সামনে ছিলো সিংহ দরজা, আজ সেই সিংহ দরজা আর নেই । ১৯০০ সালের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হয়ে গেলে হরিপুর রাজবাড়ীও দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পরে।
রাঘবেন্দ্র নারায়ন ও জগেন্দ্র নারায়ন রায় কর্তৃক রাজবাড়ীটি বড় তরফের রাজবাড়ী নামে পরিচিতি পায়। এ রাজবাড়ীর পশ্চিমে নগেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ও গিরিজা নারায়ন চৌধুরী ১৯১৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ী নির্মান করেন। যার নাম ছোট তরফের রাজবাড়ী । হরিপুরের এই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীটি সংস্থারের অভাবে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজন প্রবীন ব্যক্তি বলেন, হরিপুর রাজবাড়ী দুটি এ এলাকার ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ছিল । একটি ইতিপূর্বে বিলিন হয়ে গেছে , এখন যেটি ছিল তাঁও ধংসের পথে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এটি সংস্কার করা উচিত ছিল, কিন্তু প্রশাসনের অবহেলা কারণে আজ ধংস হয়ে গেছে প্রায়। গত কয়েক দিনের বর্ষণের কারণে ভবনে পশ্চিমের অংশ ধসে পরে। আর হয়তো কোন দিন রাজবাড়িটির আসল রুপ ভবিষ্যৎ বংশধর কেউ দেখতে পাবে না। আমরা হরিপুর উপজেলার মানুষরা আজ হতবাক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিমকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, প্রশাসনের পক্ষ হতে সংস্কারের উদ্দ্যোগ নেওয়ার জন্য, উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করণে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদেশ পেলে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতœতাত্তি¡ক বিভাগের অধীনে থাকার কারণে আমরা ইচ্ছে থাকলেও এর সংস্কার করতে পারি নাই।