রাণীশংকৈলে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ভুট্টাখেতের ক্ষতি

এক রাতেই হাফিজুলের স্বপ্ন শেষ।ক্ষতিগ্রস্থ ভুট্টাখেত থেকে ফসল পাবেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।পাচ্ছেন না ক্ষতিপূরণের কোনো ভরসাও ।এখন তিনি খেতে গিয়ে কাঁদছেন৷ ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈল উপজেলার ভাংবাড়ী গ্রামের কৃষক হাফিজুল।পার্শ্ববতী সন্ধ্যারই গ্রামে জমি চুক্তি নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন তিনি। সেখানকার ‘এম এইচ ব্রিকস’নামের একটি ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও গরম গ্যাসে তাঁরসহ কয়েকজন কৃষকের ভুট্টাখেত ঝলসে নষ্ট হয়ে গেছে । নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে আরও অন্তত ২০ বিঘা জমির ভুট্টা। এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য উপজেলা কৃষিবিভাগে আবেদন করেছেন ।

হাফিজুল জানান,গত শনিবার হঠাৎ ওই ইটভাটার আগুন নেভানো হয়। এর কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে তাঁর জমির ভুট্টাগাছ ঝলছে হলদে হয়ে গেছে।ঝলছে যাওয়া গাছ থেকে কোনো ফসল পাওয়া যাবেনা বলে আশঙ্কা তাঁর। এনজিওর কাছ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অন্যের জমি চুক্তি নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছিলেন। কিন্তু খেত পুড়ে যাওয়ায় এখন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন ,তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

হাফিজুল আরো বলেন, এবার জমিত ভুট্টা খুব ভালো হইছেলো। ওই জমিত ১২০ থেকে ১৫০ মণ ভুট্টা হইত। কিন্তুক ইটভাটায় হামার কোমর ভাঙ্গি গেইছে।এলা হামার সংসার চলিবে ক্যামন করি।

আরেক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মহসিন আলী বলেন,বালাই হইলে,পোকায় খাইলেও কিছু ভুট্টা পাওয়া যায়। ভাটায় যেইভাবে মারচে, তাতে জমির সব ভুট্টা গাছ পুড়ে গেইছে। এ্যালা খ্যাতোত বসে কান্দা ছাড়া উপায় নাই।

অভিযোগ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ খেত পরিদর্শনে যান কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.সাদেকুল ইসলাম। পরিদর্শনের পর তিনি জানান, ভুট্টাখেতের ওপর দিয়ে ইটভাটার গরম গ্যাস প্রবাহিত হওয়ার কারণেই তা ঝলছে গিয়েছে ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ শুক্রবার(১ মে) মুঠোফোনে জানান, অভিযোগ পেয়ে ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।তার প্রতিবেদন পেলেই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নেব।তিনি বলেন,ইটভাটা স্থাপনের আগে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। সন্ধ্যারই গ্রামের ওই ইটভাটাটি স্থাপনের সময় তাদের কাছ থেকে কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয় নি। আইন অমান্য করে কৃষি জমির মাঝখানে ভাটা স্থাপন করার কারণে প্রতিবছর ওই এলাকার কয়েকটি ভাটার আশেপাশের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এবিষয়ে ইটভাটার মালিক মো. রফিক বলেন, এই ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া অনেক উঁচু দিয়ে বের হয়ে যায়।ফলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।অন্য কোনো কারণে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।এরপরও ভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হলে , আমারা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেব।