পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। প্রতিবছর নভেম্বরের শুরুর দিকে দেখা গেলেও এবার অক্টোবরের শেষের দিকেই তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য।
গত বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের পর থেকেই তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে ক্রমান্বয়ে ঝাপসা হতে হতে মিলিয়ে যায়। তবে শেষ বিকেলে সূর্যের কিরণ যখন বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের ওপর পড়ে, তখন আবারও দেখা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দিনের শুরুতে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে একটু কালচে দেখা যায়। এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা বর্ণ ধারণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবর্তন দেখতে দূরবীণ বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার এবং শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে, হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রতি বছর পর্যটকরা ছুটে যান এ পর্বতশৃঙ্গ দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং শহরের টাইগার হিল পয়েন্টে। কেউ কেউ সরাসরি নেপালে গিয়েও কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ উপভোগ করেন। যেসব বাংলাদেশি পর্যটকের এসব জায়গায় সুযোগ হয় না, তারা কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন তেঁতুলিয়ায়।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে।
নীলফামারীর ডিমলা থেকে তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি গত বছর তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেও দেখতে পারিনি। আজ হঠাৎ তেঁতুলিয়ায় এসে দেখতে পেলাম। অনেক ভালো লাগল। মনে হলো, কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছে গিয়ে দেখে এলাম।’
এদিকে, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা এলাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল ও পিকনিক স্পট।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু বলেন, ‘প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় আসেন। পিকনিক কর্নারে এসে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন। এজন্য উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিকনিক কর্নার নতুন করে সাজানো হয়েছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার থাকায় খালি চোখেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।